বাংলা - Bangla - সাহিত্য পড়ি সাহিত্য লিখি - কবিতা লিখি

কবিতা রচিত হয় কোনো একটি বিষয় বা ভাবকে কেন্দ্র করে। কবিতা তাল দিয়ে পড়া যায়। তাছাড়া কবিতায় মিলশব্দ থাকে। এখন তোমার জীবনের বা সমাজের কোনো ঘটনা বা প্রসঙ্গ কিংবা মনের কোনো ভাব বা অনুভূতি নিয়ে আলাদা কাগজে একটি কবিতা রচনা করো।

তোমার লেখা কবিতা থেকে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে দেখো-

  • কোনো বিষয় বা ভাবকে অবলম্বন করে রচিত কি না
  • লাইনগুলো সমান দৈর্ঘ্যের কি না
  • লাইনের শেষে মিলশব্দ আছে কি না
  • তাল দিয়ে দিয়ে পড়া যায় কি না

 

কবিতা কী

 

কবিতায় প্রতিফলিত হয় কবির আবেগ, অনুভূতি। কবিতার লাইনকে বলা হয় চরণ। কবিতার সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

 

  • কবিতায় লাইন বা চরণের শেষে মিলশব্দ থাকে।
  • কবিতায় শব্দের রূপ বদলে যেতে পারে।
  • কবিতা তালে তালে পড়া যায়।

 

কবিতার এসব বৈশিষ্ট্যের কথা তোমরা আগে জেনেছ। এর বাইরেও কবিতার আরো কিছু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।

ক. কবিতায় স্তবক থাকতে পারে। কবিতার অনুচ্ছেদকে বলে স্তবক। স্তবক তৈরি হয় সাধারণত একাধিক লাইন বা চরণের সমন্বয়ে। 

খ. সব কবিতা সমান গতিতে পড়া হয় না। কোনো কোনো কবিতার গতি থাকে বেশি, কোনোটি মাঝারি গতির হয়, আবার কোনো কোনো কবিতার গতি হয় কম। এই গতির নাম লয়। 

গ. কবিতায় উপমা থাকে। উপমা হলো এক ধরনের তুলনা। কোনো বিবরণকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কবিতায় উপমার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন, 'নোলক' কবিতায় পড়েছিলে, 'এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা'। এখানে রাতের অন্ধকারকে খোঁপার সাথে তুলনা করা হয়েছে।

 

কবিতার একটি ধরনের নাম ছড়া। ছড়ায় চরণের শেষে মিল থাকে, চরণগুলো প্রায় ক্ষেত্রে সমান দৈর্ঘ্যের হয়, অল্প ব্যবধানে তাল পড়ে এবং পড়ার গতি বা লয় দ্রুত হয়।

 

কবিতা পড়ি ১

 

শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬) বাংলাদেশের একজন প্রধান কবি। নাগরিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, গণ-আন্দোলন ইত্যাদি তাঁর কবিতার বিষয়। 'প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে', 'রৌদ্র করোটিতে', 'বন্দি শিবির থেকে' ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত কবিতার বই। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা কবিতার বইয়ের মধ্যে আছে 'এলাটিং রেলাটিং', 'ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো' ইত্যাদি। নিচের 'পণ্ডশ্রম' কবিতাটি শামসুর রাহমানের 'ধান ভানলে কুঁড়ো দেবো' বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

 

কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে আবৃত্তি করো।

 

পণ্ডশ্রম

 

শামসুর রাহমান

 

এই নিয়েছে ওই নিল যা

কান নিয়েছে চিলে।

চিলের পিছে ঘুরছি মরে

আমরা সবাই মিলে।

 

দিনদুপুরে জ্যান্ত আহা,

কানটা গেল উড়ে।

কান না পেলে চার দেয়ালে

মরব মাথা খুঁড়ে।

 

 

কান গেলে আর মুখের পাড়ায়

থাকল কী-হে বলো?

কানের শোকে আজকে সবাই

মিটিং করি চলো।

 

 

যাচ্ছে, গেল সবই গেল,

জাত মেরেছে চিলে।

পাজি চিলের ভূত ছাড়াব

লাথি, জুতো, কিলে।

সুধী সমাজ! শুনুন বলি,

এই রেখেছি বাজি,

যে জন সাধের কান নিয়েছে

জান নেব তার আজই।

 

মিটিং হলো ফিটিং হলো

কান মেলে না তবু।

ডানে-বাঁয়ে ছুটে বেড়াই

মেলান যদি প্রভু।

ছুটতে দেখে ছোট্টো ছেলে

বলল, 'কেন মিছে

কানের খোঁজে মরছ ঘুরে

সোনার চিলের পিছে?'

 

 

'নেইকো খালে, নেইকো বিলে

নেইকো মাঠে গাছে;

কান যেখানে ছিল আগে

সেখানটাতেই আছে।'

 

ঠিক বলেছে, চিল তবে কি

নয়কো কানের যম?

বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি

পণ্ড হলো শ্রম।

 

 

 

 

 

শব্দের অর্থ

 

 

জ্যান্ত: জীবন্ত। 

মাথার ঘাম ফেলা: পরিশ্রম করা। 

দিনদুপুরে: প্রকাশ্যে। 

মিছে: মিথ্যা। 

পণ্ডশ্রম: ব্যর্থ পরিশ্রম। 

মিটিং: সভা। 

ফিটিং: মিটিংয়ের সাথে মেলানো অনুকার শব্দ। 

মুখের পাড়া: মুখমণ্ডল। 

বৃথা: অকারণ। 

যম: মৃত্যুর দূত। 

সুধী সমাজ: জ্ঞানীজন। 

মাথা খোঁড়া: মাথা ঠোকা।

 

Content added || updated By

Promotion

Promotion